ইউনুস সরকারের এক বছর: ঋণ, লুটপাট ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার ভয়াবহ চিত্র বললেন “মোহাম্মদ আলী আরাফাত”।
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের এক বছর পেরোতে না পেরোতেই দেশের অর্থনীতিতে নেমে এসেছে গভীর অস্থিরতা। জনগণকে “দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ” দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা এই সরকার আজ নিজেই অভিযুক্ত—অর্থনৈতিক লুটপাট, অদক্ষতা এবং অস্বচ্ছ নীতিনির্ধারণের অভিযোগে।
🔹 ‘১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার’—একটি অবাস্তব দাবি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নাকি প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হতো—এমন অভিযোগ এক বছর ধরে বারবার উচ্চারণ করে চলেছে ইউনুস সরকার। কিন্তু এত বড় অভিযোগের একটিও অকাট্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত উপস্থাপন করা যায়নি।
সরল অঙ্কেই বোঝা যায়, এই দাবি বাস্তবসম্মত নয়। যদি সত্যিই প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার হতো, তাহলে পুরো ১৫ বছরে মোট পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াত প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে জিডিপির আকার এখন ৬৮৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা, অর্থাৎ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হতো ১০–১১ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬–৭ শতাংশ।
তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি ইউনুস সরকারের দাবি সত্যি হয়, তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ মিথ্যা বলেছে? নাকি এটি কেবল রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল?
🔹 ব্যাংকিং সেক্টরে ঋণের পাহাড়
এক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার নিয়েছে ১,০৪,৬৯০ কোটি টাকা ঋণ, যা আগের সরকারের তুলনায় ১১% বেশি। অথচ ব্যাংকগুলোতে তখনও ১,৯০,০০০ কোটি টাকার বেশি তরল অর্থ (লিকুইডিটি) ছিল।
প্রশ্ন উঠছে—যখন ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা ছিল, তখন এত বিপুল ঋণ তোলার প্রয়োজন কেন?
এছাড়া ৫২,০০০ কোটি টাকার নতুন মুদ্রা ছাপানো হয়েছে, যা সরাসরি মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করেছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্সের চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
🔹 উন্নয়ন থমকে, ব্যয় কমলেও সাশ্রয় জনগণের নয়
সরকারি ব্যয় বিভিন্ন খাতে কমানো হলেও এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যত স্থবির, শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারি আমদানি ও এলসি সেটেলমেন্ট গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
জাপানসহ বিদেশি উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় বড় বড় প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সামাজিক বিনিয়োগ, ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্থানীয় উন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা দুটোই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
🔹 ঋণ বেড়েছে, উন্নয়ন দেখা যায়নি
শেখ হাসিনার সময়ে প্রতিবছর গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ যেত অবকাঠামো উন্নয়নে। কিন্তু ইউনুস সরকারের প্রথম বছরেই ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলারে—যেখানে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায়নি।
বিপরীতে, বৈদেশিক ঋণের ভার বেড়েছে এবং অর্থনীতির ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে। রিজার্ভ হ্রাস, বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং বেকারত্ব বৃদ্ধিই এখন দেশের বাস্তব চিত্র।
🔹 শেয়ার বাজারে ভয়াবহ লুটপাট
গত এক বছরে শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ৭৫,০০০ কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারের টার্নওভার ও ভ্যালু ৩৪% কমে গেছে। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী বিপুল মুনাফা করেছে।
ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যমতে, ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ—যা অর্থ পাচারের নতুন দিক নির্দেশ করে।
🔹 বিদেশে অর্থ পাচারের ভয়াবহ চিত্র
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ইউরো বিদেশে পাচার হয়েছে। এই তথ্য প্রমাণ করে, দেশের অর্থনীতি এখন ভয়াবহ ঝুঁকিতে। ব্যাংক, শেয়ার বাজার ও মুদ্রা ব্যবস্থায় যে অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে, তা সরাসরি দেশের রিজার্ভকে রক্তশূন্য করছে।
🔹কে দেশ বাঁচাল, কে বিক্রি করল?
এক বছর পেরিয়ে আজ স্পষ্ট—অর্থনীতির স্থিতি নষ্ট হয়েছে, কর্মসংস্থান কমেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে। জনগণের কাঁধে ঋণ ও ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে চলছে লুটপাটের উৎসব।
তবুও ইউনুস সরকার আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গল্প ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বাস্তবতা হলো, এই এক বছরেই ঋণ, টাকা ছাপানো, শেয়ার বাজার লুট ও বিদেশে পাচারের পরিমাণ পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে।
অর্থনীতির পতন এখন চোখে দেখা বাস্তবতা—জনগণই একদিন বিচার করবে, কে সত্যিই দেশকে বাঁচাতে চেয়েছে, আর কে দেশ বিক্রি করেছে।
(ইউনুস সরকার, বাংলাদেশ অর্থনীতি, ঋণ সংকট, লুটপাট, টাকা পাচার, ব্যাংক ঋণ, শেয়ার বাজার, ড. ইউনুস, অর্থনৈতিক সংকট ২০২৫)
Comments
Post a Comment